ঢাকা ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রয়োজনে লাশ পড়বে তবু দাবি আদায় করব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:০৪:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০১৭
  • ৩৬৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাস্থ্য বিভাগের (চতুর্থ শ্রেণি) ১৯-২০তম গ্রেডে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি। তারা স্বাস্থ্য খাতে শূন্য পদে সরকারিভাবে সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এই দাবি আদায়ে তারা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।

শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান সমিতির সভাপতি মো. আবদুল খালেক।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ জারি করা প্রজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করে আবদুল খালেক বলেন, প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির ১৩তম সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্য বিভাগীয় নন-মেডিকেল কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০১৭ চূড়ান্ত করতে সম্মতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য বিভোগীয় ১৯-২০তম গ্রেডে সম্পূর্ণভাবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ নীতিমালা ২০০৮ অনুযায়ী শূন্য পদ পূরণ করা হবে। এবং স্বাস্থ্য খাতে ১৯-২০তম গ্রেডে স্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হবে। ভবিষ্যতে ওই গ্রেডে (চতুর্থ শ্রেণি) কোনো সরকারি কর্মচারী থাকবে না। যার ফলে স্বাস্থ্য খাতে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। সেই সঙ্গে কর্মচারীদের খুবই কষ্টকর ও বেদনাদায়ক জীবন কাটাতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মান্নান বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল আলমসহ অনেকে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে সভাপতি আবদুল খালেক ও সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। সরকার বা মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তের পেছনে কী কারণ দেখিয়েছে- এমন প্রশ্নে আবদুল খালেক বলেন, ‘তাদের অভিযোগ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ঠিকমতো কাজ করে না। কাজে ফাঁকি দেয়। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, যারা কাজে ফাঁকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিক। তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিক। সবার প্রতি অবিচার কেন? সব চিকিৎসক বা দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকমতো কাজ করে তো? করে না। তবু তাদের শাস্তি হয় না। আমাদের হোক, কিন্তু সবার প্রতি অবিচার সহ্য করা হবে না।’

সংবাদ সম্মেলনের পরে যদি দেখেন আপনাদের কথা সরকার বা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় শুনছে না, তখন কী করবেন? এর উত্তরে আবদুল খালেক বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে বা অধিদপ্তরে চিঠি দেব প্রথমে। তখনো যদি দেখি কোনো কাজ হচ্ছে না, এরপর আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলনের ডাক দেব। মিটিং-মিছিল করব। প্রয়োজনের লাশ পড়বে তবু দাবি আদায় করে ঘরে ফিরব। আমরা চাই আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারি আইন অনুযায়ীই হোক।’

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের সমস্যা জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ হলে বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে সরকার টেন্ডার দেবে। তখন ক্ষমতার মালিক সব ওই টেন্ডার নেওয়া কোম্পানির। স্থায়ী চাকরির কথা বলে নিয়োগ-বাণিজ্য করে তারা টাকা নেবে প্রচুর। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তারা চাকরি স্থায়ী করতে পারবে না। কারণ প্রতি বছর বছর টেন্ডার হয় নতুন করে। বেতনও কম দেবে। সরকার নির্ধারিত বেতন যদি ১৬ হাজার টাকা হয়, তখন দেখা যাবে তিন-পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কাজ সারছে কোম্পানিগুলো। আর বাকি টাকা কোম্পানিগুলোর পকেটে যাচ্ছে।’

হেলাল উদ্দিন আরো বলেন, সারা বাংলাদেশে কমপক্ষে পাঁচ লাখ শূন্যপদ আছে। সেগুলোর নিয়োগ দিচ্ছে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে। এটা একটা অনিশ্চিত যাত্রা। আজ চাকরি আছে তো কাল থাকবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার পরামর্শে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এসব করছে। যাতে সরকারের টাকা খরচ কম হয়।

চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, সেবা গ্রহণ নীতিমালা ২০০৮ অনুযায়ী সরকার যদি শূন্য পদগুলোতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সব নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে তখন যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে যাবে। চাকরির কোনো গ্যারান্টি থাকবে না। বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন কর্মচারীরা।

পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের খোঁজ নিয়ে দেখেন। পরিবারপ্রথার মতো এখানে লোকজন চাকরি-বাকরি পায়। মানে হচ্ছে বাবার ছেলে কিংবা ছেলের ছেলেও এই হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে চাকরি করছেন। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হলে কেউ আর এভাবে বসে বসে চাকরি-বাকরি পাবে না। ফলে তাদের অনেক সমস্যা হবে। তা ছাড়া অন্য যারা এভাবে চাকরিতে ঢুকবে তাদের জীবনও খানিকটা অনিশ্চিত এটাও সত্য।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

প্রয়োজনে লাশ পড়বে তবু দাবি আদায় করব

আপডেট টাইম : ০৭:০৪:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাস্থ্য বিভাগের (চতুর্থ শ্রেণি) ১৯-২০তম গ্রেডে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি। তারা স্বাস্থ্য খাতে শূন্য পদে সরকারিভাবে সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এই দাবি আদায়ে তারা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।

শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান সমিতির সভাপতি মো. আবদুল খালেক।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ জারি করা প্রজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করে আবদুল খালেক বলেন, প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির ১৩তম সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্য বিভাগীয় নন-মেডিকেল কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০১৭ চূড়ান্ত করতে সম্মতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য বিভোগীয় ১৯-২০তম গ্রেডে সম্পূর্ণভাবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ নীতিমালা ২০০৮ অনুযায়ী শূন্য পদ পূরণ করা হবে। এবং স্বাস্থ্য খাতে ১৯-২০তম গ্রেডে স্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হবে। ভবিষ্যতে ওই গ্রেডে (চতুর্থ শ্রেণি) কোনো সরকারি কর্মচারী থাকবে না। যার ফলে স্বাস্থ্য খাতে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। সেই সঙ্গে কর্মচারীদের খুবই কষ্টকর ও বেদনাদায়ক জীবন কাটাতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মান্নান বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল আলমসহ অনেকে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে সভাপতি আবদুল খালেক ও সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। সরকার বা মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তের পেছনে কী কারণ দেখিয়েছে- এমন প্রশ্নে আবদুল খালেক বলেন, ‘তাদের অভিযোগ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ঠিকমতো কাজ করে না। কাজে ফাঁকি দেয়। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, যারা কাজে ফাঁকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিক। তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিক। সবার প্রতি অবিচার কেন? সব চিকিৎসক বা দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকমতো কাজ করে তো? করে না। তবু তাদের শাস্তি হয় না। আমাদের হোক, কিন্তু সবার প্রতি অবিচার সহ্য করা হবে না।’

সংবাদ সম্মেলনের পরে যদি দেখেন আপনাদের কথা সরকার বা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় শুনছে না, তখন কী করবেন? এর উত্তরে আবদুল খালেক বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে বা অধিদপ্তরে চিঠি দেব প্রথমে। তখনো যদি দেখি কোনো কাজ হচ্ছে না, এরপর আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলনের ডাক দেব। মিটিং-মিছিল করব। প্রয়োজনের লাশ পড়বে তবু দাবি আদায় করে ঘরে ফিরব। আমরা চাই আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারি আইন অনুযায়ীই হোক।’

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের সমস্যা জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ হলে বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে সরকার টেন্ডার দেবে। তখন ক্ষমতার মালিক সব ওই টেন্ডার নেওয়া কোম্পানির। স্থায়ী চাকরির কথা বলে নিয়োগ-বাণিজ্য করে তারা টাকা নেবে প্রচুর। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তারা চাকরি স্থায়ী করতে পারবে না। কারণ প্রতি বছর বছর টেন্ডার হয় নতুন করে। বেতনও কম দেবে। সরকার নির্ধারিত বেতন যদি ১৬ হাজার টাকা হয়, তখন দেখা যাবে তিন-পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কাজ সারছে কোম্পানিগুলো। আর বাকি টাকা কোম্পানিগুলোর পকেটে যাচ্ছে।’

হেলাল উদ্দিন আরো বলেন, সারা বাংলাদেশে কমপক্ষে পাঁচ লাখ শূন্যপদ আছে। সেগুলোর নিয়োগ দিচ্ছে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে। এটা একটা অনিশ্চিত যাত্রা। আজ চাকরি আছে তো কাল থাকবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার পরামর্শে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এসব করছে। যাতে সরকারের টাকা খরচ কম হয়।

চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, সেবা গ্রহণ নীতিমালা ২০০৮ অনুযায়ী সরকার যদি শূন্য পদগুলোতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সব নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে তখন যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে যাবে। চাকরির কোনো গ্যারান্টি থাকবে না। বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন কর্মচারীরা।

পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের খোঁজ নিয়ে দেখেন। পরিবারপ্রথার মতো এখানে লোকজন চাকরি-বাকরি পায়। মানে হচ্ছে বাবার ছেলে কিংবা ছেলের ছেলেও এই হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে চাকরি করছেন। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হলে কেউ আর এভাবে বসে বসে চাকরি-বাকরি পাবে না। ফলে তাদের অনেক সমস্যা হবে। তা ছাড়া অন্য যারা এভাবে চাকরিতে ঢুকবে তাদের জীবনও খানিকটা অনিশ্চিত এটাও সত্য।